“আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান।”
নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতার এই লাইনটির কথা মনে পড়লেই যার নাম সবার আগে উঠে আসে সেই বিশ্ব কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ জন্মদিন । প্রতিটা দিনই কিছু না কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভাব হয় সঙ্গে বিশেষ গুরুত্ব ও রাখে। তারই মধ্যে ২৫ শে বৈশাখ একটি । যেখানে দাঁড়িয়ে আজও আমরা জীবনে-মরনে-শয়নে স্বপনে-প্রেমে-গানের-ছন্দে কবিগুরুকে ছাড়া ভাবতেই পারি না। পৃথিবীজুড়ে এই দিনটির বিশেষত্ব জানেনা এমন মানুষ হয়তো বিরল।
“জীবনে মরনে স্বয়নে স্বপনে তুমিই শ্রেষ্ঠ হে কবিগুরু।
তুমি ছাড়া সকল কিছুই যেন অসম্পূর্ণ।
তাই তোমারে জানাই লহ প্রণাম।”
অতুলনীয় কাব্যিক প্রতিভা অভাবনীয় মিষ্টি-মধুর ছন্দ অলঙ্কার কবিগুরুর কবিতার বৈশিষ্ট্য । সাথে অসম্ভব দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে আজও তিনি বিশ্বকবির রূপে অবস্থান করছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে তাই দুই এক পাতায় লেখা অত্যন্ত ক্ষুদ্র মানসিকতার পরিচয় হবে। হয়তো কাব্য উপন্যাস লিখলেও কম পড়ে যাবে কম পড়ে যাবে রবীন্দ্রনাথের কৃতিত্বের কথা। তবে কবিগুরুর একটি ক্ষেত্র ব্যাক্তিগত অত্যন্ত টানে আমায়। আকর্ষণ করে প্রবল ভাবে। জীবনে চলতে চলতে প্রতি মুহূর্তে আমরা যা যা কিছু অনুভব করি রবীন্দ্রনাথের লেখা তা স্পষ্টতঃ পরিলক্ষিত। আমরা জানি যে সভ্যতার বিবর্তন এর সাথে সাথে মানুষের স্বপ্ন কল্পনা ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি সবকিছুর পরিবর্তন হয়। কিন্তু কয়েক শতাব্দী আগে থেকেও বর্তমান পরিস্থিতির সম্মুখীন করে এবং অনুভব করে কল্পনায় লেখা তা কিন্তু বিরল এবং অত্যন্ত দূরদর্শী মানসিকতার প্রমাণ রাখে। সাথে কৃতিত্ব তো আছেই।
উপন্যাস থেকে ছোট গল্প, কবিতা থেকে নাটক রবীন্দ্রনাথের লেখা স্পষ্টত প্রমাণ সাথে গভীর আবেগ গভীর প্রেমের এবং অভাবনীয় শিক্ষার পরিচয় মেলে । সাধারণত মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা শিক্ষার মোটামুটি সীমা অতিক্রম করতে পারি। কিন্তু এক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে পড়লেও বোধ হয় তার সীমানা পেরোতে পারা সম্ভব নয়। আসলে তিনি এতটাই বিস্তৃত জগতের যে স্বল্প পরিসরে তা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়।
রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতা গল্প ছোট নাটক নাটক প্রবন্ধ উপন্যাস এবং সংগীতের সংখ্যা অগণিত এবং তার সমস্ত লেখা অসাধারণ পাণ্ডিত্বের সাক্ষী রাখে। শুধু তাই নয় তিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েও নাইট উপাধি কে ত্যাগ করেন। শুধু যে তিনি উপাধি পাওয়ার জন্যই জগৎজোড়া খ্যাতি লাভ করেছেন তা কিন্তু একেবারেই নয় । তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে সকল মানুষের অন্তরাত্মায় সহজেই প্রবেশ করেছেন। তার মধ্যে অনন্ত প্রেম গভীর আবেগ ভাষা জ্ঞান সকল কিছুর প্রতিভা নিমেষেই প্রকাশ পায়।
আসলে রবীন্দ্রনাথের লেখা সম্ভার এতটাই বিস্তর যে মা নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই । ৫২ টি কাব্যগ্রন্থ ৩৮ টি নাটক ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬ প্রবন্ধ রচনা করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । সাথে ৯৫ টি ছোটগল্প ১৯১৫ টি গান যথাক্রমে অন্তর্ভুক্ত আছে গীতবিতানে। তাই তাঁর এই লেখাগুলিকে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত করা হয়েছে। এর বাইরে তিনি প্রায় 2000 ছবি এঁকেছিলেন ।
রবীন্দ্রনাথের লেখা কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে বলাকা, গীতাঞ্জলি ও সোনারতরীর মধ্যে কয়েক হাজার কবিতা বিদ্যমান। সাথে তিনি যে উপন্যাসিক প্রতিভার অধিকারী তা যথাযথ প্রকাশ পেয়েছে চোখের বালি, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, শেষের কবিতা যোগাযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে।
এসবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ সংখ্যা সংখ্যাতীত। তারমধ্যে জীবনস্মৃতি, ছন্দ, আত্মপরিচয়, শিল্প , বিজ্ঞান, ধর্ম , সঞ্চয় , বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন , ইতিহাস পরিচয় ,সংগীত এগুলি উল্লেখযোগ্য তালিকা বিদ্যমান।
এসবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের সংখ্যা সংখ্যাতীত। তারমধ্যে পোস্টমাস্টার, কাবুলিওয়ালা, ছুটি , সমাপ্তি অতিথি , খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, একরাত্রি এগুলি উল্লেখযোগ্য তালিকায় বিদ্যমান।
গোটা পৃথিবী জুড়ে মহান থেকে মহান ব্যক্তিদের আনাগোনার শেষ নেই ।আর এই তালিকায় যারা প্রদত্ত তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু বা জীবন কাল নিয়ে চর্চা খুব কম লোকজন করে থাকে। তার মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনই একজন ব্যক্তিত্ব যার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কিছুই বিশ্বজোড়া চর্চিত তাই আজ ২৫ শে বৈশাখের তাঁর জন্মতিথিতে যুগ যুগ ধরে তারই শ্রদ্ধা গৃহীত এবং তাঁকে স্মরণ করে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে বিশ্বকবি কে দেওয়া আত্মসম্মান। তাইতো আজও তিনি আমাদের সকলের অন্তরাত্মায়-
“তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”।