বিশ্ব বিখ্যাত গুহা মধ্যে একটি হল অজন্তা গুহা। অজন্তা গুহা ভারতের মহারাষ্ট্রে রাজ্যে ঔরংবাদ জেলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত।এখানে অনেক গুলি গুহা নিয়ে গঠিত হয়েছে এই অজন্তা গুহা। অজন্তা গুহা একটি বিশাল ঘোড়ার নাল আকারে একটি পাহাড়কে কেটে এই গুহাগুলি তৈরি করা হয়েছে। এখানে মোট 30 টি গুহা আছে। এই গুহার ভিতরে চিত্র, মূর্তি, শিল্পকলা দেখার জন্য মহারাষ্ট্রে পর্যটকদের একটি আকর্ষণ কেন্দ্র।এটি দেখার জন্য প্রতিবছর দেশ বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে। আজ আমরা জানব এই অজন্তা গুহা সম্পর্কে কিছু গুরুপ্ত পূর্ন তথ্য যেটা নিচে আলোচনা করা হল:-
অজন্তা গুহাসমূহ ভারতের মহারাষ্ট্রে গভীর খাড়া গিরিখাতের পাথর কেটে খোদাই করা প্রায় ৩০টি গুহা-স্তম্ভ। এগুলো খ্রিষ্টপূর্ব দোসরা শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।এগুলোতে পাওয়া ছবি ও ভাস্কর্য, তৎকালীন বৌদ্ধধর্মীয় শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। অজন্তার দেয়ালের চিত্রগুলিতে বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। ফ্রেস্কো ধাঁচের এই দেয়ালচিত্রগুলোর জীবন্তরূপ এবং এগুলো তে নানা রঙের সমৃদ্ধ ও সূক্ষ্ম প্রয়োগ এগুলোকে ভারতের বৌদ্ধ চিত্রশিল্পের সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শনে পরিণত করেছে। গুহাগুলো মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ জেলার জলগাঁও রেলস্টেশনের কাছে, আজিন্তা বা অজন্তা গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত (২০ ডিগ্রি ৩০ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৫ ডিগ্রি ৪০ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশ)। ১৯৮৩ সাল থেকে এই স্থানটি একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

অজন্তাশৈলী ভারতে এবং অন্যত্র যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে জাভাতে। সংশ্লিষ্ট দুই মিনার গোষ্ঠীর সঙ্গে,ভারতীয় ইতিহাসের দুই গুরুত্বপূর্ণ সময় জড়িয়ে আছে। সামগ্রিক অজন্তা গুহা, ভারতীয় শিল্পবিবর্তনের ব্যতিক্রমী সাক্ষ্য বহন করে, সেইসাথে বৌদ্ধসম্প্রদায়ের ভূমিকা নির্ধারণ করে, বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় প্রেক্ষাগৃহগুলো, ভারতে গুপ্ত এবং তাদের তাৎক্ষণিক উত্তরাধিকারীর বিদ্যালয়গুলো ও অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলো।২৯টি গুহা প্রায় ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে খনন শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু তারা ইলোরার অণুকূলে ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে পরিত্যক্ত হয়। পাঁচটি গুহাতে মন্দিরগুলো ছিল এবং চব্বিশটি গুহাতে মঠ ছিল যেগুলো প্রায় ২০০ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও শিল্পীদের দ্বারা অধিকৃত ছিল বলে মনে করা হয়। ১৮১৯ সালে একটি ব্রিটিশ বাঘশিকারের দল দ্বারা পুনরাবিষ্কৃত হবার আগে অবধি, অজন্তাগুহা ধীরে ধীরে বিস্মৃতিতে তলিয়ে গিয়েছিল। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণলিপিতে অজন্তার বর্ণনা আছে। গুহাগুলো দীর্ঘকাল অরণ্যের আড়ালে বিস্মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। উনিশ শতকে, ১৮১৯ সালে, এগুলো নতুন করে আবিষ্কৃত হয়। অজন্তা ও অদূরবর্তী ইলোরা ভারতের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।

এই বিশাল গুহা গুলি তৈরি করতে অনেক সময় লেগেছিল। এই গুহা তৈরিতে অনেক রাজার ভূমিকা আছে । তাদের মধ্যে প্রধান ভূমিকা হল সাতবাহন সাম্রাজ্য এবং বাকটক সাম্রাজ্য। এই অজন্তা গুয়া মোট 26 টি গুহা আছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ গুহা বৌদ্ধ ধর্মের জন্য প্রসিদ্ব। এই গুহা গুলি দুটি চরণে তৈরি হয়েছে। এই গুহা গুলির কাজ তৈরি হয়েছিল আনুমানিক দ্বিতীয় শতাব্দী । প্রথম চরণে কিছু গুহা তৈরি হয়েছিল তাদের মধ্যে হল,9,10,12,13 এবং 15 নং গুহা গুলি হয়েছিল।এই গুহা গুলি হয়েছিল সাতবাহন সাম্রাজ্যের সময়ে এবং দ্বিতীয় চরণে অন্যান্য গুহা গুলি তৈরি হয়েছিল। এটি বাটাকর সাম্রাজ্যের সময় ও বিভিন্ন রাজার সময়ে হয়েছিল।অজন্তা গুহা মোট ৩০ টি গুহা আছে। এই গুহা গুলি বিভিন্ন শাসকে বিভিন্ন সময়ে তৈরি করেছিল বলে যে শাসক যে ধর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল সেই ধর্মের গুহা করে ছিল।এই গুহা গুলির মধ্যে ২৪ টি গুহা বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে জড়িত এবং ৫ টি গুহা হিন্দু ধর্মের সঙ্গে জড়িত। এই গুহা গুলি তৈরি করা হয়েছিল যার বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করত এবং যারা বৌদ্ধ শিক্ষা গ্রহণ করত, আর বৌদ্ধ ভিক্ষুক রা এখানে তাদের জীবন নির্বাহ করত।
উনবিংশ শতাব্দী তে একজন ইংরেজ অফিসার ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার সেনাদের নিয়ে শিকার করতে ছিল সেই সময় তারা এই গুহা গুলি দেখতে পায়। তারপর সৈনিক রা গুহায় যাবার জন্যে রাস্তা তৈরি করে এবং এই গুহার সম্পর্কে সরকার কে জানায়। এরপর থেকে জ্ঞাত হয়েছে মানুষ অজন্তা গুহা সম্পর্কে। এই অজন্তা গুহার সীলমোহর থেকে কত ই না পুরনো ইতিহাস থেকে কাহিনী বারবার উঠে এসেছে ইতিহাসের পাতায়। যা আজও অক্ষত ও জীবন্ত।
