পিরিয়ড বা মাসিককালীন সময়ে সব নারীই কমবেশি সমস্যার মুখোমুখি হন। এ সময় শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যার মধ্যে- পিরিয়ডের ব্যথা, মেজাজ খিটখিটে থাকা, রাগ, উত্তেজনা, খাবারে অনীহা ইত্যাদি।
তবে বেশ কিছু অভ্যাস পিরিয়ডকালীন জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। যেমন ভারি ব্যায়াম করা থেকে শুরু করে ভুল খাবার খাবার খাওয়ার কারণেও জটিলতা বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেকের জরায়ু নিচের দিকে নেমে আসে, তলপেট স্ফিত হয়ও ব্যথা করে। এমনকি বমিও হয়।
কিছু কাজ আছে যা এই সময়ে করলে শরীরের অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক পিরিয়ডকালীন সময়ে কোন কাজগুলো ভুলেও করবেন না-
১) পিরিয়ডের সময় জল বেশি করে পান করতে হবে। অনেকেই আছেন যারা পর্যাপ্ত জল পান করেন না। এতে কিন্তু পিরিয়ডকালীন সময়ে জটিলতা আরও বাড়তে পারে।
২) প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে শরীর আর্দ্র থাকে। এমনকি রক্তে তরল্যের ভারসাম্য বজায় থাকে। মাসিকের সময় তরল খাবার খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
৩) এ সময় অনেকেরই পেটে ভীষণ ব্যথা থাকে বলে উপুর হয়ে শুয়ে থাকেন। যা একেবারেই ভুল কাজ। উপুড় হয়ে শুলে হার্ট রেটে তারতম্য হয়, রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় ও অক্সিজেন ঠিকমতো সরবরাহ হয় না বলে মাথা ঝিমঝিম বা ব্যথা করে।
৪) মাসিকের সময় ভারী জিনিস তোলা বা ভারি কাজ করবেন না ভুলেও। এতে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা বাড়তে পারে।
৫) পিরিয়ডের সময় ভারী কোনো ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। তবে পিরিয়ডের জটিলতা কমাতে বিশেষ কিছু ব্যায়াম রয়েছে, সেগুলো করতে পারেন। যোগব্যায়ামের কিছু আসন পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে খুবই কাজে দেয়।
৬) প্রাকৃতিক কাজ আটকে রাখার বদঅভ্যাস অনেকেরই আছে। প্রস্রাব পেলে তা আটকে রাখা কখনোই উচিত নয়। এটি কিডনির ওপরে ভয়াবহ রকমের চাপ ফেলে।
৬) এ সময় বারবার প্যাড পাল্টানোর ভয়ে অনেকেই প্রস্রাব চেপে রাখেন। এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এ কাজ তলপেটের ওপর চাপ ফেলে। তাই ব্যথা বাড়তে পারে।
৭) মাসিকের সময় হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকায় রাগ, বিরক্তি, জেদ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। তবে অতিরিক্ত রাগ এ সময় শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
৮) তাই ইতিবাচক কাজ করুন এ সময়। মন ভালো রাখলে শারীরিক জটিলতাও কমবে। পারলে মেডিটেশন বা ধ্যান করুন।
৯) পুষ্টিবদদের মতে, মাসিকের সময় ডিম বা চিংড়ি মাছ খাওয়া উচিত নয়। এতে মাসিকের রক্ত অনেকটা গন্ধযুক্ত হয়। ডিম খেলেও কুসুম ছাড়া খেতে হবে।
১০) শসা এড়িয়ে যাওয়া ভালো এ সময়। কারণ শসার বীজে থাকা কিছু উপাদানের কারণে পিরিয়ডের ফ্লো কমে যেতে পারে। শসা খেলেও বীজ ফেলে দিয়ে খেতে হবে।
১১) এ সময় বেশি তেল মশলাদার খাবার কিংবা লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ পিরিয়ডের সময় এমনিতেই পেটে ফোলাভাব থাকে। এসব খাবার গ্যাস্টিকের সমস্যা ও পেটের ফোলাভাব আরও বাড়িয়ে তোলে। এমনকি শরীর পানিশূন্যও হতে পারে।
১২) পিরিয়ডের সময় রাত জেগে থাকবেন না। এ সশয় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়অ জরুরি। এতে পিরিয়ডের জটিলতা অনেকটাই কমানো যায়। অন্তত ৮-৯ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন এ সময়।
১৩) বর্তমানে ওজন কমাতে অনেকেই ইন্টারটিং ফাস্টিং করেন। তবে পিরিয়ডের সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না। এতে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
১৪) পিরিয়ডের সময় ভুলেও গোপন স্থান অতিরিক্ত পরিষ্কার করা কিংবা সুগন্ধি সাবান বা বডি ওয়াশ ব্যবহার করবেন না। কারণ ওই স্থান অনেক সংবেদনশীল হওয়ায় সাবান ব্যবহারে ফলে মাইক্রোবায়োমের স্তর কমে গিয়ে বিপদ বাড়তে পারে।
১৫) এ সময় যৌনমিলন করা একেবারেই উচিত নয়। এতে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
১৬) মাসিকের সময় শরীরে ব্যথা বেড়ে যায়। কারণ এ সময় ত্বক হয় অতিরিক্ত ষংবেদনশীল। ফলে এ সময় ওয়াক্সিং করা থেকে বিরত থাকুন।
১৭) দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলুন মাসিকের সশয়। এ ধরনের খাবার গ্যাস্ট্রিকের সৃষ্টি করে। এমনকি শরীরে পানি ধরে রাখে এমন খাবার। অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যেরও কারণ হতে পারে।