দিন বদলেছে। বদলেছে সভ্যতার বিবর্তনে পালাবদলের পালা। পাল্টেছে মানুষের আদব-কায়দা জীবনধারণের রীতিনীতি সঙ্গে। টেকনোলজি এতটাই উন্নত হচ্ছে যে মানুষকে কর্মের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে কুরে বানিয়ে দিচ্ছে ক্রমে ক্রমে। তাই এখন পরিশ্রমের মাপকাঠি যতই কমে গেছে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো রকম কাজ করার জন্য পরিশ্রমের হ্রাসের পাশাপাশি ঘরে বসেই জটিল থেকে বৃহত্তর কাজ থেকে শুরু করে যেকোনো রকম টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে। ব্যাংকের টাকা লেনাদেনা থেকে শুরু করে, কোথাও যাবার জন্য টিকিট কাটা থেকে ব্যাংকিং সংক্রান্ত যেকোন অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা মেটানো সম্ভব।
সাইবার ক্রাইম কি?
সাইবার অপরাধ বা কম্পিউটার অপরাধ এমন একটি অপরাধ যা কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্কিত। কম্পিউটার একটি অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বা এটা নিজেই লক্ষ্য হতে পারে। দেবারতি হালদার ও কে জয়শংকর সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন “আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যেমন ইন্টারনেট (চ্যাট রুম, ইমেল, নোটিশ বোর্ড ও গ্রুপ) এবং মোবাইল ফোন (এসএমএস / এমএমএস) ব্যবহার করে, অপরাধমূলক অভিপ্রায়ে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি, কিংবা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, বা ক্ষতির কারণ হওয়া”। এ ধরনের অপরাধ একটি জাতির নিরাপত্তা ও আর্থিক স্বাস্থ্য হুমকি হতে পারে। আইনগত বা আইনবহির্ভূতভেবে বিশেষ তথ্যসমূহ বাধাপ্রাপ্ত বা প্রকাশিত হলে গোপনীয়তার লঙ্ঘন ঘটে। হ্যাকিং, কপিরাইট লঙ্ঘন, শিশু পর্নোগ্রাফির মতো অপরাধগুলো বর্তমানে উচ্চমাত্রা ধারণ করেছে। লিঙ্গের ভিত্তিতে দেবারতি হালদার ও কে জয়শংকর নারীর প্রতি সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন, “ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, ইচ্ছাকৃতভাবে মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির উদ্দেশ্যে নারীর প্রতি অপরাধ”। আন্তর্জাতিকভাবে, রাষ্ট্রীয় বা ও-রাষ্ট্রীয় সত্তা কর্তৃক গুপ্তচরবৃত্তি, আর্থিক প্রতারণা, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, কিংবা অন্তত একটি রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত এরূপ বিষয়ে হস্তক্ষেপজনিত সাইবার অপরাধকে সাইবার যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
একটি রিপোর্ট (ম্যাকাফি কর্তৃক স্পন্সরকৃত) অনুমান করে যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বার্ষিক ক্ষতি ৪৪৫ বিলিয়ন ডলার। তবে একটি মাইক্রোসফটের রিপোর্ট দেখায় যে জরিপ ভিত্তিক অনুমান “একেবারে ভ্রান্ত” হয় এবং সত্যিকারের লোকসানকে অতিরঞ্জিত করে। অনলাইন ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড জালিয়াতির ফলে ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় $ ১.৫ বিলিয়ন ডলার হারিয়ে গেছে। ২০১৬ সালে একটি গবেষণায় অনুমান করা হয়, সাইবার অপরাধের খরচ ২০১৯ সালে ২.১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে।
সাইবার ক্রাইমের কারণ:-
এই ইন্টারনেটের যুগে আমরা আমাদের জীবনের প্রায় অনেক বেশি পরিমানের সময় “online” থেকেই খরচ করি।
তবে, ইন্টারনেট এতো মজার এবং সবাইর প্রিয় হওয়ার কারণ কিন্তু প্রচুর রয়েছে।
নতুন নতুন খবর অনেক তাড়াতাড়ি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেয়ে যাওয়া, যেকোনো জায়গার থেকে আমাদের প্রিয়জনের সাথে কথা, চ্যাটিং এবং video call এর মাধ্যমে যোগাযোগ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন কেনাকাটা করা, যেকোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য গ্রহণ, মনোরঞ্জনের জন্য ভিডিও দেখা, অনলাইন গেম খেলা এবং online bill payment এর মতো প্রায় সব ধরণের কাজ আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক সহজে করে নেয়াটা সম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাইবার ক্রাইমের প্রকারভেদ:-
কম্পিউটার জালিয়াতি হলো কম্পিউটার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অভিপ্রায়ে কিছু করা বা করা থেকে বিরত থাকার জন্য কোন বিষয়ের মিথ্যা বর্ণন। এই প্রেক্ষাপটে, প্রতারক নিম্নলিখিত সুবিধা পাবে। অনুমোদিত তথ্য পরিবর্তন। এজন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন। তথ্য পরিবর্তন কর্মচারীদের চুরির সাধারণ ধরন, যেমন ভুল তথ্য, নির্দেশনা বা প্রক্রিয়া প্রবেশ করানো। আউটপুট পরিবর্তন, ধ্বংস বা চুরি। অননুমোদিত লেনদেন গোপন করার জন্য এটা করা হয় যা সহজে ধরা মুশকিল। সঞ্চিত তথ্য পরিবর্তন বা মুছে ফেলা। জালিয়াতির অন্যান্য ধরন হতে পারে কম্পিউটার সিস্টেম, ব্যবহার করে ব্যাংক জালিয়াতি, কার্ড জালিয়াতি, পরিচয় প্রতারণা, চাঁদাবাজি, এবং শ্রেণীবদ্ধ তথ্য চুরি ইত্যাদি। ফিশিং ও সামাজিক প্রকৌশল প্রয়োগ করে এবং গ্রাহক ও ব্যবসার ওপর.লক্ষ্য করে নানা ধরনের ইন্টারনেট স্ক্যাম সংঘঠিত হচ্ছে। বর্তমান প্রযুক্তিতে মোবাইলে একটি অনবদ্য ব্যবহারিক মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত সহজ এবং এভেলেবেল ছোট থেকে বড় ব্যবহার করে না এরকম মানুষের সংখ্যা বিড়াল আর তার জন্য মোবাইল মাধ্যমে প্রবণতা যথেষ্ট পেরেছে আজকাল কম্পিউটারের যে কার্যকলাপ হয় সেটা পুরোটাই মোবাইল দেওয়া সম্ভব আলাদা করে এক লাইনের জন্য মোবাইল ব্যাবহার কেউ করে না যার কারণে ছবি এডিট থেকে শুরু করে ফোনের ভয়েস রেকর্ড বা ফিশিং ইমেইল এমনকি ভিডিওগ্রাফি সবটাই সহজ হয়েছে। হ্যাকিং, কপিরাইট লঙ্ঘন, শিশু পর্নোগ্রাফির মতো অপরাধগুলো বর্তমানে উচ্চমাত্রা ধারণ করেছে। মোবাইল ডিভাইস এবং তথ্যের নিরাপত্তা সংক্রান্ত শঙ্কা
অনুনমোদিত বা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মোবাইলে ব্যবহার এবং হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া মোবাইলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত শঙ্কা। হারিয়ে বা চুরি যাওয়া ডিভাইস বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যক্তি জীবনে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। যদি কোনো কারণে এটি হারিয়ে যায় তবে তা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় শঙ্কা হিসাবে দেখা দেয়। কারণ, অনেক সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাইবার অপরাধীদের হাতে চলে যেতে পারে। ফোনে ইনস্টল করা অ্যাপের থেকেই ব্যবহারকারীর বয়স, লিঙ্গ, এলাকা, আগ্রহ, শারীরিক অবস্থা এমন কী ব্যবহারকারী কোন সন্তান আশা করছে কি না জানা যায়। ফোন আনলক করার জন্য পাসওয়ার্ড বা বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ ব্যবহার করুন। সিম কার্ডের জন্য সিম লক অ্যাকটিভেট করুন। কারণ, যতই আপনি ফোন লক করুন না কেন, মোবাইলটি খোয়া গেলে যে কেউ আপনার সিমকে ব্যবহার করতে পারবে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে
মোবাইল ডিভাইসে তথ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যপ্ত না থাকলে, ব্যক্তির পরিচয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকির মুখে চলে যেতে পারে। আপনার ব্যক্তিগত ব্যাকিং তথ্যও নিরপত্তা হারাতে পারে।
তাই নিরাপত্তার খাতিরে ব্যাকিং এবং ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত তথ্য, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মোবাইল ফোনে না রাখাই ভালো। ব্যবহার করার পর অ্যাপ থেকে লগ আউট নিশ্চত করুন।
মুক্ত ওয়াই-ফাই
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুক্ত ওয়াই-ফা-এর সঙ্গে মোবাইল ফোনের সংযোগ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি কারণ হতে পারে। তাই মুক্ত ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে ব্যাকিং লেনদেন বা সংবেদনশীল তথ্য আদানপ্রদান না করাই ভালো। অন্য ব্যবহারকারীর যদি আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারের প্রয়োজন না হয় তবে ব্লুটুথ কানেশনকে অদৃশ্য রাখুন। যে কেউ ব্লুটুথের মাধ্যমে আপনার ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে প্রবেশ করেত চায়, তবে ওই ব্লুটুথের সীমানার বাইরে চলে আসুন। তাহলে আপনা থেকেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মুক্ত ওয়াইফাই-এ লগ-ইন করলেন, তারপর একটি ভিপিএন পেলেন বা নিরাপদ নেটওয়ার্কের বার্তাল, তবু সেই নেটওয়ার্কে থাকাকালীন কোনো আর্থিক, চিকিৎসা বা ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ করবেন না। মুক্ত নেটওয়ার্কে প্রবেশের পর কোনো পাসওয়ার্ড বা কোনো সংবেদনশীল তথ্য দেবেন না।
মোবাইল সংক্রান্ত ঝুঁকি:-
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি থেকে যায়। আমরা অনেক সময় ফ্রি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশ ডাইনলোড করে থাকি। সেগুলি গোপনীয়তার শর্ত আমরা কখনও খুলেও দেখি না। প্রচুর অ্যাপ্লিকেশন আছে যারা আমাদের তথ্য চুরি করতে পারে। অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার মোবাইলে ম্যালওয়ার হিসাবে ডাউনলোড হয়। অস্বীকৃত সূত্র থেকে মোবাইল বা ল্যাপটপে কোনো কিছু ডাউনলোড করবেন না। কোনো অ্যাপকে তথ্য নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার আগে ভাবুন সত্যিই কী একটি ফ্ল্যাশলাইটের আপনার মোবাইলের লোকেশন জানায় কোনো প্রয়োজন আছে? ব্যবহার না হলে অ্যাপকে দেওয়া অনুমিত ফিরিয়ে নিন।
মোবাইলে ফোনে আক্রমণ হলে কী ধরনের প্রভাব পড়ে:
মোবাইলে সংরক্ষিত ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ্যে চলে আসে বা হারিয়ে যায়। ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যারে জন্য আর্থিক ক্ষতি এবং উচ্চ মূল্যের এসএমএস এবং কল পরিষেবার জন্য ক্ষতি। গোপনীয়তা আক্রমণের মুখে পড়ে। যার মধ্যে রয়েছে, ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতে মোবাইল ফোন লোকেশন, ব্যক্তিগত এসএমএস এবং কল ট্র্যাকিং। মোবাইল ফোনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং অজ্ঞাতে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য মাধ্যম হয়ে ওঠা।
প্রতিকার:-
কম্পিউটার অপরাধ বা মোবাইল ক্রাইম সনাক্তকরণ এবং শাস্তির ব্যাপারে সাইবার অপরাধী কার্যক্রমবিরোধী কর্মসূচী একটি বড় ব্যাপার। জাঁ-লুপ রিসেটের (ইএসএসইসি আইএসআইএসে রিসার্চ ফেলো) মতে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অভিগম্যতা আর সাইবার অপরাধের বাধা হিসাবে কাজ করে না। মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে হ্যাকিং সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করায় কয়েক বছর আগের তুলনায় হ্যাকিং এখন অনেক কম জটিল। ব্লগিং সম্প্রদায় অনেক বেশি তথ্য শেয়ারিংএ অবদান রাখায় নতুনরা পুরোনো হ্যাকারদের ‘জ্ঞান এবং পরামর্শ থেকে উপকৃত হতে পারছে। উপরন্তু, হ্যাকিং তুলনাযমূলক সস্তা হয়ে গেছে। ক্লাউড কম্পিউটিং যুগের আগে,স্প্যাম বা কেলেঙ্কারী করতে একটি ডেডিকেটেড সার্ভার, সার্ভার ব্যবস্থাপনা, নেটওয়ার্ক কনফিগারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী মান জ্ঞান, ইত্যাদি দক্ষতা প্রয়োজন ছিল। সেবা হিসেবে ইমেইল সফটওয়্যারটি পরিমাপযোগ্য, সস্তা, বিশাল এবং এর দ্বারা সহজে স্প্যাম ছড়ানো যেতে পারে। জাঁ-লুপ রিসেট ব্যাখ্যা করেন যে,ক্লাউড কম্পিউটিং আক্রমনের একটি উপায় হিসেবে যেমন – জোরপূর্বক পাসওয়াররড, বুটনেট নাগালের উন্নতি, অথবা স্প্যামিং প্রচারণা সুবিধা, একটি সাইবার অপরাধী জন্য সহায়ক হতে পারে।
বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে অবশ্যই প্রযুক্তিবান্ধব হতে হবে। তবে যে কোনো ডিভাইস ব্যবহারের আগে এর ক্ষতিকর দিকটিও জানতে হবে। অভিভাবকরা অনেক সময় টেকনোলজি সম্পর্কে জানেন না, তারা শিখতেও চান না। বাচ্চাদের হাতে ডিভাইস দেওয়ার আগে এর সম্পর্কে অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে। তারপর বাচ্চাদের হাতে দিতে হবে। তাদের হাতে দেওয়ার আগে ফিল্টারিং করা যেতে পারে। সে কী কী দেখবে, আর কী কী দেখতে পারবে না, তা বলে কিংবা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ আপনার বাসার ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক বা মোবাইল অথবা ডিজিটাল ডিভাইসে কিছু সাইট ব্লক করে দিতে পারেন। সেগুলো রেগুলার মনিটরিং করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে টেকনোলজি সম্পর্কে যখন বাচ্চা বুঝতে শিখবে, তখন সেই শিশুটি বড় হয়ে সাইবার হয়রানি রুখতে সক্ষম হবে। তার ছোটবেলা থেকে মানসিকভাবে এ বিষয়ে জেনেশুনে বেড়ে উঠবে।
শিক্ষার্থীদের ব্রাউজ হিস্ট্রি যদি মা-বাবা দেখতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো হয়। ভিপিএন যদি ব্যবহার করে, তাহলে যে জায়গাগুলোতে যাওয়ার সুযোগ নেই, সেখানেও যে কেউ যেতে পারে। যদি ব্রাউজ হিস্ট্রি দেখেন, তাহলে এগুলো বুঝতে পারবেন। সামাজিক শিক্ষাটা ডিজিটাল ফরম্যাটে নিয়ে এলেই হবে। মানুষ ভুল করতেই পারে। সংশোধনের জায়গাও আছে। বাবা-মাকে অবশ্যই সন্তানকে বোঝাতে হবে। দরকার হলে যে জায়গায় সমস্যা মনে করছেন, সেটা নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। যারা হ্যারাসমেন্টের শিকার হচ্ছেন, তাদের প্রতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ঝড়ের বেগে দেখানো উচিত হবে না। ভুক্তভোগীদের কিছুটা সময় দিতে হবে। ধীরে ধীরে তাদের বোঝাতে হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
তদন্ত
কম্পিউটার প্রমাণের একটি উৎস হতে পারে। এমনকি যেখানে একটি কম্পিউটার সরাসরি অপরাধমূলক কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় না, সেখানেও একটি লগ ফাইল আকারে অপরাধমূলক রেকর্ড থাকতে পারে। অধিকাংশ দেশে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের পূর্বা-নির্ধারিত সময় পরিমাপের জন্য তাদের লগ ফাইল রাখার প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরুপঃ ইউরোপীয় ব্যাপক তথ্য ধারণ নির্দেশিকার (ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশে প্রযোজ্য) মতে, সব ই-মেইল ট্রাফিক সর্বনিম্ন ১২ মাসের জন্য রেখে দেওয়া উচিত।
আইন-প্রণয়ন
নানারকম সহজ আইনের দরূন সনাক্তকরণ থেকে বাচতে সাইবার অপরাধীরা উন্নয়নশীল দেশগুলো বেছে নিচ্ছে। এসব উন্নয়নশীল দেশ, যেমন ফিলিপাইনে, সাইবার অপরাধের আইনগুলো নামমাত্র হয়ে থাকে। এই দুর্বল আইন সাইবার অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমানায় অলক্ষিত থাকার অনুমতি দেয়। এমনকি যখন পরিচয় প্রকাশ পায়, এই অপরাধীরা শাস্তি বা একটি দেশের কাছে হস্তান্তর হওয়া এড়াতে পারে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যেখানে আইন বিকশিত হয়েছে ও যা প্রসিকিউশনের জন্য অনুমতি দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি কঠিন প্রমাণিত হওয়ায় এফবিআইয়ের মতো এজেন্সিগুলো অপরাধী গ্রেফতার এড়িয়ে প্রবঞ্চনার আশ্রয় নেয়। উদাহরণস্বরূপ, দুই রাশিয়ান হ্যাকার কিছু সময়ের জন্য এফবিআইকে ফাঁকি দিচ্ছিল। এফবিআই একটি সিয়াটল, ওয়াশিংটন ভিত্তিক জাল কম্পিউটিং কোম্পানির ফাদ পাতে। তারা তাদের এই কোম্পানিতে কাজ প্রদানের মাধ্যমে দুই রাশিয়ান হ্যাকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আকৃষ্ট করাতে সমর্থ হয়। সাক্ষাৎকার সমাপ্তির পরে, সন্দেহভাজনদের ভবনের বাইরে গ্রেপ্তার করা হয়। এমন চালাক কৌশল কখনও কখনও সাইবার অপরাধীদের ধরার একটা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হতে পারে যখন দুর্বল আইন এটা অন্যথায় অসম্ভব করে তোলে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সাইবার অপরাধ লড়াইয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিলে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। নির্বাহী আদেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দোষী সাব্যস্ত সাইবার অপরাধীদের সম্পদ জব্দ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তাদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ রোধ করতে পারবে। এই প্রথম কঠিন আইন প্রণয়ন করে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
যাইহোক, কিছু হ্যাকারকে কম্পিউটার অপরাধের তাদের জ্ঞানের কারণে প্রাইভেট কোম্পানি দ্বারা তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভাড়া করা হয়, যা তাত্ত্বিকভাবে বিপথগামী ইনসেনটিভ তৈরী করতে পারে। এর একটি সম্ভাব্য পাল্টা যুক্তি হতে পারে, আদালত কর্তৃক সাব্যস্ত হ্যাকারদের ইন্টারনেট বা কম্পিউটার ব্যবহার থেকে বিরত রাখা, এমনকি তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দেযর পরেও -যদিও কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এবং আরো অনেক কিছু দৈনন্দিন জীবনে কেন্দ্রীয় হয়ে উঠেছে, এই ধরনের শাস্তি আরো কঠোর ও নির্মম হিসেবে দেখা যেতে পারে। যাইহোক, সূক্ষ্ম পন্থা উদ্ভাবন করা হয়েছে যা কম্পিউটার এবং / অথবা ইন্টারনেটের নিষিদ্ধ ছাড়াই সাইবার অপরাধী আচরণ পরিচালনা করতে পারে।এই পন্থা ব্যক্তির কম্পিউটার পর্যবেক্ষণ এবং / অথবা পরীক্ষাকাল এবং / অথবা প্যারোলে কর্মকর্তাদের কম্পিউটার অনুসন্ধান দ্বারা নির্দিষ্ট ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়ে জড়িত।
জনসচেতনতা
প্রযুক্তির উন্নতি এবং আরও অনেক বেশি মানুষের ইন্টারনেটের উপর নির্ভরতা হিসাবে সংবেদনশীল তথ্য যেমন ব্যাঙ্কিং বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করায় অপরাধীরা সে তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাইবার অপরাধ বিশ্ব জুড়ে মানুষের জন্য একটি হুমকি হয়ে উঠছে। কিভাবে তথ্য রক্ষা করা হচ্ছে ও অপরাধীরা তথ্য চুরি করার জন্য কী কৌশল ব্যবহার করছে সে সম্পর্কে সচেতনতা আজকের বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এফবিআই এর ইন্টারনেট ক্রাইম অভিযোগ কেন্দ্র অনুযায়ী ২০১৪ সালে ২৬৯৪২২টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সব দাবি মিলিয়ে সেখানে $ ৮০০.৪৯২.০৭৩ মোট ক্ষতিই ছিল। কিন্তু এখনো সাইবার অপরাধ গড় ব্যক্তির ধরাছোয়ার বাইরে হবে বলে মনে হচ্ছে না। বার্ষিক ১.৫ মিলিয়ন সাইবার আক্রমণের ঘটনা ঘটে,এর মানে হল দিনে ৪০০০ আক্রমণ, ঘণ্টায় ১৭০ বা প্রতি মিনিটে প্রায় তিন আক্রমণ হচ্ছে। গবেষণায় দেখাচ্ছে যে শিকারদের মাত্র ১৬% মানুষ হামলা থামাতে জিজ্ঞেস করেছিল। যেকেউ যেকোন কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের দ্বারা শিকারে পরিণত হতে পারে, এজন্য কিভাবে অনলাইনে সবাইকে রক্ষা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাথায় রাখা দরকার যে ক্রাইম যেমন আছে আইন ও তেমন আছে। তাই সাইবারক্রাইম সংক্রান্ত কোনো রকম কোনো অসুবিধা মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ইদানীংকালে একটি নম্বরটি প্রোভাইড করা হয়েছে। যদি কেউ এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে পড়েন তাহলে যত শীঘ্রই সম্ভব ‘1930’ এই নম্বরে যোগাযোগ করবেন।