“পরের বুলি নকল করে নটের মত কেন চলিস?”
বাংলা ভাষাকে চিরকালই ছোটো চোখে দেখে মানুষ। কারণ বাঙালি জাতটাই চিরকালীনই বোকা । তাই সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে বাঙালিরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে নকল করে এসেছে । আর তার জন্যই বাংলা ভাষার প্রতি এত অরাজগতা।
” হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন তবে অবহেলা করি।”
আসলে বাংলার প্রবল ঐতিহ্য প্রাচুর্য থাকার দরুনই বাংলায় ইংরেজদের অধীনে ছিল ২০০ বছর। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় তারও আগে থেকে অন্য জাতিরা দিনের পর দিন রাজত্ব করে এসেছে। যার ফলস্বরুপ এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে অনেকে প্রাচুর্য থাকার দরুনই বাংলা কে দমিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করা হতো অনবরত । ইংরেজরা বাঙালি জাতিকে ছোট নজরে দেখার কারণটাই হলো বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি এতটাই সুন্দর যে তাকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা।
দেশ স্বাধীনের অনেক টা সময় কেটে গেছে। ইংরেজরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু যে বীজটা বাঙ্গালীদের মধ্যে রেখে গেছে তার আজও অনবদ্য হয়ে আছে। আসলে আমাদের অপরকে নকল করার প্রবনতা প্রবলভাবে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি স্বভাবতই পছন্দ করি আর তার জন্যই আমাদের এই পরিণতি । কিন্তু পৃথিবীতে এখনো অনেক দেশ আছে যারা গণতান্ত্রিকভাবে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাহলে ভাববার বিষয় যে বাংলায় থেকে আমরা বঙ্গবাসী হয়ে বাংলাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য তার চোখে দেখি । আবার কখনো কেউ বাংলা ভাষার কথা বলাকে খুব নিম্ন মানসিকতাই চোখে দেখে। কখনো আবার বাংলা ভাষায় কোন কথা বললে যেন স্ট্যাটাস মেইনটেনেন্সর হয়না। কখনো আবার তাদের মতানুযায়ী কারোর মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা দেখেছি যে বাংলা মিডিয়াম স্কুল থেকে যারা পাস তারা করে তারা যেন কোন যোগ্যতার অধিকারী নন। সব মিলিয়ে তাদেরকে একটা হেয় প্রতিপন্ন করার প্রবনতা।
আমরা নন্দনকে বাংলার যতই প্রাণকেন্দ্র বলি না কেন অথচ বাংলা সিনেমা দেখাকে একটু অন্যরকম ভাবে ভাবি। আর তার জন্য এখন বাংলা সিনেমায় এখন ইংরেজি বাক্য বেশি চোখে পড়ে । সাথে বাংলা গানে ও এই হিন্দি শব্দের প্রচলন বেশি। আসলে বোঝা দরকার যে সিনেমাওয়ালারা সিনেমা তৈরি করে ব্যাবসা করার জন্য। তাই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই বাংলা সিনেমায় ইংরেজির প্রভাব এত রাখা হয়। তাছাড়া ইংরেজি শব্দ টা কোথায় যেন একটা শ্রেণীর পরিচয় দেয়। তাই বাংলা ছবিতে শ্রেণীর ব্যালেনস রাখার জন্য ইংরেজি শব্দ বা বাক্য বেশি ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি সকলের ধারণা আবার হিন্দি শব্দ রোমান্টিকতার পরিচয় দেয় বেশী, যা বাংলা শব্দ খুঁজে দিতে পারে না । কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার যে বাংলা ভাষার মত স্বচ্ছতা আর কোথাও নেই । কারণ যদি কটা হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে যদি পরিপূর্ণ ব্যালেন্স মেইনটেন্যান্স করা যেত তাহলে রবীন্দ্রনাথের লেখায় রবীন্দ্রসঙ্গীত যুগ যুগ ধরে হিট লিস্টে টিকে থাকতো না। আসলে ব্যাপারটা আদতেই দৃষ্টিভঙ্গির। তাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন শীল।