ডিসেম্বর মানেই একটা ছোটখাটো ভ্রমণের পরিকল্পনা করা। তবে এই করোনা পরিস্থিতিতে দুটো জিনিস সব সময় মাথায় রেখে চলতে হয়। প্রথমত করোনা বিধি আর দ্বিতীয়টা হল পকেট। বাজেটের কথা মাথায় রেখেই প্ল্যান করতে হয় বেড়াতে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে কম খরচে কোন ডেস্টিনেশনে আপনি শীতের ছুটি কাটাতে পারবেন, দেখে নিন এক নজরে…
ধনলৌটি, উত্তরাখণ্ড: ধনলৌটি উত্তরাখণ্ডের একটি বিখ্যাত পার্বত্য অঞ্চল এবং পর্যটন কেন্দ্রও বটে। এখানকার পরিবেশ শান্ত এবং সুন্দর। আপনি যদি শহরের কোলাহল থেকে দূরে যেতে চান, তাহলে ধনলৌটি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। পাইন আর দেবদারু গাছে ঘেরা এই ধনলৌটি মুসৌরি থেকে মাত্র ২৮ কিমি দূরে অবস্থিত।
মাউন্ট আবু, রাজস্থান: দিলওয়ারা জৈন মন্দিরের জন্য বিখ্যাত, রাজস্থানের মাউন্ট আবু কম খরচে একটি ভাল হিল স্টেশন। মাউন্ট আবু এই পাহাড়ের ওপর রয়েছে একটি মন্দির যা এই অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ। তাছাড়া এখানের মনোরম আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। আরাবল্লি পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বেশ উপভোগ করা যায় এখান থেকে।
নৈনিতাল, উত্তরাখণ্ড: উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালও ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানের প্রধান আকর্ষণ হল নৈনি লেক। তাছাড়া এর আশেপাশে ভিমতাল, সাততালের মত একাধিক ঘোরার জায়গা রয়েছে। এখানের পরিবেশও খুব সুন্দর এবং শান্ত। মনোরম আবহাওয়ার জন্য ক্রিসমাসে বেশ ভিড় থাকে এই হিল স্টেশনে।
পুদুচেরি: তামিলনাড়ুর দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত পুদুচেরি আপনাকে একটি বিদেশী জায়গার অভিজ্ঞতা দেবে। পূর্বের সুন্দর ফরাসি স্থাপত্যগুলি আপনাকে মনে করবে যেন আপনি ফ্রান্সে আছেন। এই শহরটি একসময় স্বাধীনতার আগে ফরাসিদের অধীনে ছিল। আপনি এখনও এখানের শিল্প, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যে ফরাসি ঐতিহ্যের ঝলক দেখতে পাবেন। সর্বোত্তম অংশটি হল এখানে ঘোরার জন্য আপনাকে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে না। অন্যদিকে, ক্রিসমাসের সময় এই শহর সেজে ওঠে উৎসবের সাজে।
পুষ্কর. রাজস্থান: পুষ্কর রাজস্থানের একটি সুন্দর শহর। এই শহরটি ব্রহ্মা মন্দির এবং বিখ্যাত পশু মেলার জন্য পরিচিত। এটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ঐতিহ্য সহ সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি জায়গা। আপনি একটি আধ্যাত্মিক এবং ঐশ্বরিক আনন্দময় দিনের জন্য পুষ্করে যেতে পারেন। এখানে আপনি স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা করতে পারেন বা ঘাটে একটি ছোট ফটোশুট করতে পারেন। রাজস্থানের অন্যান্য ডেস্টিনেশনগুলির তুলনায় এই পুষ্কর অনেকটাই সস্তা।
কাসোল: হিমাচল প্রদেশ: হিমাচল প্রদেশের পার্বতী নদীর তীরে ছোট্ট জায়গা কাসোল। ছোট কিন্তু সুন্দর জায়গা। এই জায়গাটি আসলে শুধু ভারতীয়দের জন্য নয়, বিদেশীদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় পর্যটক কেন্দ্র। এখানে অনেকগুলি ট্রেকিং রুট রয়েছে, যে কারণে ট্রেকারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই জায়গাটি। তার সঙ্গে সবুজে ঘেরা ছোট্ট জনপদ, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এখানে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আপনি খুব বেশি ব্যয় না করেই এখানে ঘুরে আসতে পারেন।
তোলপাড় করা আবহাওয়া৷ উত্তরবঙ্গে আগামী দু -তিন দিনে একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আইএমডি৷ দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় বেশি বৃষ্টি হবে৷ বজ্র বিদ্যুৎ সহ বড় বৃষ্টির সম্ভাবনা জারি রয়েছে৷ এদিকে কালিংম্পং, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, মালদহে ভারী বৃষ্টির ওয়েদার আপডেট রয়েছে৷ মঙ্গলবার এবং বুধবার এই ধরণের আবহাওয়া জারি থাকবে৷ এরই জেরে অ্যালার্ট জারি রয়েছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে৷ এদিকে উত্তরবঙ্গে তোলপাড় করা আবহাওয়ার ছাড়া দক্ষিণবঙ্গ ও কলকাতায় এখন সেভাবে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে না৷ সব জায়গাতেও ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা জারি রয়েছে৷ কলকাতায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকবে৷
আপেক্ষিক আর্দ্রতার সর্বোচ্চ পরিমাণ ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রচণ্ডভাবে আর্দ্র৷ এদিকে এই দুই পরিস্থিতির জেরে ফের অস্বস্তিকর আবহাওয়া জারি থাকবে৷ ফিল লাইক তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো এমনটাই ওয়েদার আপডেটে জানিয়েছে অ্যাকুওয়েদার৷ কলকাতায় আজ দিনের একাধিক সময়ে হালকা ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা জারি রয়েছে৷ দিনে থেকে রাত বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টির ওয়েদার আপডেট করা হয়েছে৷ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও আকাশ মূলত পরিষ্কার থাকবে৷ ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা জারি থাকছে সব জেলাগুলিতেই৷ তবে ভারী বা মাঝারি বৃষ্টিপাতের চান্স কম থাকবে৷ এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মতো দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে আইএমডি৷ দিল্লি, এনসিআর, উত্তরপ্রদেশ, উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টি জারি থাকবে৷ বৃষ্টি হবে মহারাষ্ট্রে৷ স্কাইমেট ওয়েদার আপডেটে জানিয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি জারি থাকবে৷ যার জেরে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা অনেকটা নামবে৷ এবং আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা পড়া শুরু হতে পারে৷
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন বা ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন বা বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তেল পরিবহনের লক্ষ্যে নির্মাণাধীন একটি পাইপলাইন। পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আনার লক্ষ্যে ২০২০ সালে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৩১.৫০ কিলোমিটার পথে পাইপলাইন স্থাপন কাজ শেষ হলে ভারতের নুলাইবাড়ী রিফাইনারি লিমিটেড থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আসবে দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেল ডিপোতে। এতে জ্বালানি তেল সংকট দূর হবে দেশের উত্তরাঞ্চলে। পার্বতীপুর উপজেলার সোনাপুকুর নামক স্থানে এ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করা হয়। ভারতের নুমালীগড় থেকে ১৩১.৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গত ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি জানান, এ ১৩১.৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতের অংশে পাঁচ এবং বাংলাদেশের অংশে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১২৬.৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পে ভারত ৩৪৬ কোটি রুপি ও বাংলাদেশ ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় করবে। আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় ভারত থেকে সরাসরি বাংলাদেশ পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি হবে।
বছরের শুরুতে ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আসবে বাংলাদেশে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশ। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপন প্রায় ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে। ভারতের শিলিগুড়িতে চলছে ডিজেল সরবরাহের প্রস্তুতি। আর বাংলাদেশের পার্বতীপুর প্রস্তুত হচ্ছে ভারত থেকে আসা ডিজেল সংরক্ষণ ও সরবরাহের কাজ। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহের কমিশনিং নিয়েও কাজ করছে দুই দেশ। এই পাইপলাইন প্রকল্পের প্রাক্কলন ছিল ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার ৩০৩ কোটি টাকা দেয় এবং বাংলাদেশ সরকার বাকি অর্থ ২১৭ কোটি টাকা দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়কাল ২০২০ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ মাস পর ২২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের প্রথম চালানটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে। আনুষ্ঠানিকভাবে একই বছরের মার্চের শুরুতে পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছরগুলোতে এটি ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ডিজেল নেবে। বাংলাদেশ বর্তমানে লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার ২০০ টন ডিজেল আমদানি করে এবং বিপিসি বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের পার্বতীপুর তেল ডিপোতে জ্বালানি বহন করে এবং পরে ডিজেল গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারত থেকে সরাসরি দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রেলহেড তেল ডিপোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আনার উদ্যোগ নিয়েছে দু-দেশের সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১৮ সালে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ফলে বৃহস্পতিবার পার্বতীপুরের সোনাপুকুর অংশে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। পাইপলাইন ভারতের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ১৩০ কিলোমিটার ভারতের শিলিগুড়ি, বাংলাদেশের পঞ্চগড়, নীলফামারীর হয়ে পার্বতীপুরে আসবে। তেল সরবরাহ শুরু হলে উত্তরাঞ্চলের অঞ্চলের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে তেল পাবে।
মহালয়া শব্দের অর্থ মহান আলয় অর্থাৎ মহান আশ্রয়। আবার মহালয়ার অর্থ হিসেবে পিতৃলোককে বোঝায়। এই জগতের স্বর্গতঃ পিতৃপুরুষরা যেখানে থাকেন বলে বিশ্বাস। অর্থাৎ পিতৃলোককে সশ্রদ্ধ স্মরণ করার অনুষ্ঠানই ‘মহালয়া’ নামে পরিচিত। পিতৃপক্ষের শেষ হবার পর, অমাবস্যার অবসান হলে দেবীপক্ষের শুরু হয়। সেই লগ্নটিকেই আমরা মহালয়া বলে থাকি। এই জন্য মহালয়া ‘স্ত্রীকারান্ত’। এই ত্রিভুবনে দেবী দুর্গাই হলেন মহান আশ্রয়। তার আগমনের লগ্নই ‘ মহালয়া ‘। আবার কেউ কেউ বলেন ‘ পিতৃলোক ‘ হল সেই মহান স্থান। মহালয়া হল পিতৃপূজা ও মতৃপূজার সন্ধিক্ষণ। আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের শুরুতে যে অমাবস্যা আসে, তাকেই মহালয়া বলে অভিহিত করা হয়। মহালয়ার দিন একসাথে আমরা পিতৃপূজা ও মাতৃপূজা দুই’ই করে থাকি। তাই মানব জীবনে, মানব মননে এই দিনটি এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আনে। ভারতীয় ঐতিহ্যের এ এক অপূর্ব অনুভূতি। মহালয়া থেকে দুর্গাপূজার দিন গোনা শুরু হয়ে যায়। মহালয়ার ছয় দিন পরেই আসে মহাসপ্তমী। ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন। লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের অভিলাষ নিয়ে। শরতের এই পূজাকে দেবীর অকাল বোধন বলা হয়। কারণ শ্রীরামচন্দ্র পূজাটি করেছিলেন অকালে, অসময়ে। আসল দুর্গাপূজা হলো বসন্তে তাই একে বাসন্তী পূজা বলা হয়। শোনা যায় সুরথ রাজা এই আসল পূজাটি করেছিলেন বসন্ত কালে। কোন শুভ কাজ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বজসহ সমগ্র জীব জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এটাই বিশ্বাস। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। এর পোশাকি নাম ‘তর্পণ”। তর্পণ মানে সন্তুষ্ট করা। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আশায় বুক বেঁধে এমনই করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে এই ভারতের কোটি কোটি মানুষ মহালয়ার প্রভাতে তিন গন্ডুষ জলের অঞ্জলি দিয়ে আসছেন। আর আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়ে উঠছে – ” ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যন্ত ভূবন এয়ম, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্ত ” -এই মন্ত্র। যার মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে চলেছেন তাদের বিদেহী পিতৃপুরুষ এবং পূর্বপুরুষদের। পুরাণে বলা আছে মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করার দায়িত্ব পান। ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত কোন মানুষ বা কোন দেবতার পক্ষে মহিষাসুরকে বধ করা সম্ভব ছিল না । ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহীষাসুর তার ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত হয়ে ওঠে। একে একে দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে। অঘোষিত ভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হয়ে ওঠার বাসনা তাকে পেয়ে বসে । ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী তখন বাধ্য হয়ে মিলিতভাবে ” মহামায়া ” র রূপে অমোঘ নারী শক্তি সৃষ্টি করলেন। দেবতাদের দান করা দশটি অস্ত্রে সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা সুসজ্জিত হয়ে উঠেন। নয় দিন ব্যাপী ঘোরতর যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন। এভাবেই অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয় প্রতিষ্ঠা পায়। যুগের পর যুগ এই বিশ্বাস, এই ধারা বয়ে আসছে । মহালয়া যেন তারই পরিচয় বহন করে চলেছে। মহালয়া হচ্ছে সেই দিন যেদিন দেবী দুর্গা এই মর্ত্যে অবতরণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস। তিনি এসেছিলেন সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে। মহালয়া পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনা বলে মহালয়াকে দুটি গতিশীল বা চলমান উৎসবের সমাহার বা সম্মিলনও বলা যেতে পারে । হিন্দু পুরাণ মতে এই সময় পিতৃপুরুষের আত্মার স্বর্গ-প্রাপ্তির জন্য পুত্রের দ্বারা শ্রাদ্ধক্রিয়া করা আবশ্যক যাকে বাংলায় বলা হয় ‘ তর্পণ’। প্রাকভোর বা প্রাতঃকালে নদীতে পুত্র তার পিতৃপুরুষদের উদ্দ্যেশ্যে ‘পিণ্ডদান ‘ করে থাকে। আসলে তা জল ও খাদ্য প্রদানের চেষ্টা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
দেবীপক্ষ মানে দেবীকাল। দেবী দুর্গা প্রধান পূজার সাতদিন আগেই মর্ত্যে আসেন। চারদিন ধরে চলা মহাপূজার দিনগোনা শুরু হয় মহালয়ার পূণ্যলগ্ন থেকেই। আর সমগ্র ভূভারতে পূজার ঢাকে কাঠি পড়ে যায় । হিন্দুমতে ভাদ্রের অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কালকেই দেবীপক্ষ বলে মানা হয়। বিশ্বাস করা হয়, হিন্দুদের জন্য কোন পবিত্র কাজ করার শ্রেষ্ঠ সময নাকি এটাই। উত্তর ভারতে অমাবস্যা পরবর্তী নয়দিনকেই নবরাত্রি হিসেবে পালন করা হয়। অমাবস্যার শেষ দিনে দুর্গাপ্রতিমার চোখ অঙ্কিত করা হয়। যা ‘চক্ষুদান’ নামে পরিচিত । মহালয়া অন্য এক বর্ণনা পাওয়া যায় মহাভারতের কাহিনীতে। দাতা কর্ণের মৃত্যুর পর তার কৃত শুভকর্মের জন্য তিনি স্বর্গপ্রাপ্ত হন। সেখানে কর্ণ ক্ষুধার্ত হলে তাকে প্রচুর সোনা, রুপা দেওয়া হয়। তিনি জীবিতকালে সকলকে তাই দিয়ে আসতেন। ক্ষুধার্ত কর্ণ হতাশ হন এবং খাবার চান। যমরাজ তখন বলেন জীবিতকালে কর্ণ মানুষকে কেবল সোনা দানাই দিতেন। কিন্তু পূর্বজদের কখনো খাবার ও জল দেননি। কর্ণ নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ক্ষমা চান। তখন যমরাজ তাকে চোদ্দ দিনের জন্য মর্ত্যে ফেরত পাঠান। কর্ণ মর্ত্যে এসে মানুষকে খাবার প্রদান করেন। পূর্বজদেরও খাদ্য উৎসর্গ করেন। মানুষের আসল প্রয়োজনটা অনুধাবন করতে পারেন। অনেকে বলেন এই চোদ্দ দিনও ‘মহালয়া’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। মহালয়ার প্রভাতে বা ভোরে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় মহিষাসুরমর্দিনীর আগমনী গান। ঘরে ঘরে বেজে ওঠে ‘ জাগো তুমি জাগো ‘- এর সুর। এর মধ্যে দিয়ে মাকে যেন জাগ্রত হওয়ার করুণ আবেদন জানানো হয়। যাতে মা আবির্ভূত হয়ে এই মর্ত্যধামের সকলের ক্লেশ দূর করেন। মহালয়ায় ‘পূর্বপুরুষদের উদ্দ্যেশ্যে বছরে একবার জলদান করা হিন্দুমতে অত্যন্ত আবশ্যক হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ প্রেতলোকে একদিন আমাদের মর্ত্যের হিসেবে এক বছর কালের সমান বলে বিশ্বাস। আর পূর্বপুরুষরাও নাকি সামান্য জলেরই প্রত্যাশা করেন। এই পূণ্যলগ্নে সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী সব একে অপরের অত্যন্ত কাছাকাছি চলে আসে।’ মহালয়া যেন এক বিশ্বাস। যুগ যুগ ধরে বয়ে আসা এক অমোঘ বিশ্বাস । যা আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের ধারনাকেই প্রতিষ্ঠিত করছে। যা এই মর্ত্যে জীবিতকালেও প্রতিফলিত হয়ে থাকে । মহালয়ার তর্পণ যুগ যুগ ধরে যাবতীয় মানবিক মূল্যবোধের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ভারতীয় সংস্কৃতির এক স্তম্ভ । ধারক এবং বাহক। এর গুরুত্ব অমলিন এবং অক্ষত যা ভাবীকালেও অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে মনে হয়।