সভ্যতার বিবর্তনের হাত ধরে আমরা অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি এই পৃথিবীতে এ কথা অস্বীকার করার জো রাখে না। কিন্তু এই বিবর্তনই যে নিছকই বিবর্তন কিন্তু পরিবর্তন নয় তা বলাবাহুল্য। প্রযুক্তিগত সমাজ ব্যবস্থা, উন্নত যুগ , উন্নত যানচলাচল, জীবন যাত্রার মান উন্নত এগুলোতো নেহাতই বাহ্যিক। আভ্যন্তরীণ পরিবর্তের মান যে নেহাতই নিম্নমানের তা কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত সমাজে পথ চলতে চলতে বুঝে গেছি। শুধু বুঝে গেছি বললে ভুল হবে সাথে অনুভব্ও করছি প্রতি মূহুর্তে। যে প্রযুক্তিগত উন্নত সমাজ ব্যবস্থায় আমরা বাস করি। যেখানে আমরা রোবটের ন্যায় জীবন যাপন । অন্তরাত্মা বিহীন একটা মানুষের পরিকাঠামো। নেই কোন অনুভূতি, নেই কোনো দয়া-মায়া, ভালোবাসা । নেই কোন মানুষের প্রতি প্রযোজ্য সম্মান ।‌ আজ বলতে বাধা নেই আমরা তো সম্মান করি ডেজিগনেশন কে। কোনো ব্যক্তিকে নয় যেখানে ডেজিগনেশন নেই সেখানে হয়তো বা কদর ও নেই। অকপটে কারো প্রশংসা করতে দ্বিধাবোধ করি। কারোর ভালো দেখলে হিংসা করি । মন খুলে হাসতেও দ্বিধাবোধ করি। অথচ অপরের দুঃখে পরিতৃপ্তি অনুভব করি। আসলে এই ধরনের যান্ত্রিক মানসিকতায় এই ধরনের অনুভূতিই শ্রেয়। এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। যদি এর নাম বিবর্তন হয় তাহলে বলব আদিম যুগের ন্যায় হিংস্র পশুদের বসবাস করা শ্রেয়।

এত শুধু সমাজের পরিকাঠামো, এর ভেতরে ঢুকলে বোঝা যায় যে আভ্যন্তরীণ দিকটা কতটা কদাকার। এর নাম সমাজ। যেখানে আমরা বাস করি, পথ চলি, প্রতিমুহূর্তে চলতে চলতে কখনো কখনো আবার ক্লান্ত হয়ে পড়ি, আবার কখনো মুখ থুবড়ে পড়ি আবারও পথ চলি। সে সমাজে আজও মেয়েদের উন্নতিকে নিম্ন চোখে দেখা হয়। যে সমাজে আজও মেয়েদেরকে বউ করে আনা হয় শুধু বংশবৃদ্ধি ও সংসার চালানোর জন্য। যে সমাজে মেয়েদের সৌন্দর্য কে নিয়েও খারাপ তকমা লাগানো হয়। অকপটে তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখা হয় শুধুমাত্র ভোগের পণ্য হিসেবে। মনে করা হয় একটি মেয়ে হয়ে অন্য একটি মেয়ের রূপ নিয়ে হিংসার আগুনে জ্যাজ্যোল্যমান হতেও দেখা যায়। সে সমাজের প্রতি ছিঃ কথাটা একেবারে আবশ্যক । একটা কথা জ্ঞানে-অজ্ঞানে আমরা হয়তো ভুলে যাই যে সুন্দর বিবেচনা ও সুন্দর কথা সুন্দর মনের পরিচয়। জীবনের অত্যন্ত মূল্যবান শিক্ষা এবং ঐশ্বর্য এই সবটাই অর্জন করতে হয় এগুলো হিংসা দাঁড়া ছিনিয়ে নেওয়া যায় না। আর রইল বাকি রূপ এটা হলে ঈশ্বর প্রদত্ত ‌এটার উপর আমাদের কোনো হাত নেই। তবু যেটা আমরা করতে পারি সেটা হল সুন্দর মন সুন্দর রূপ কে নির্ধারণ করতে পারে । তাই পজিটিভ এবং সরল এবং বৃহত্তম মানসিকতাই যে কোন ব্যক্তি রাখুক না কেন সে যদি ঈশ্বর প্রদত্ত সুন্দর নাও হয় তার ক্ষেত্রেও বাহ্যিক রূপে একটা আলাদা প্রভাব ফেলে‌ কিন্তু এই গুণগতমান যদি কারো না থাকে তাহলে সে যতই ঈশ্বরপ্রদত্ত সুন্দর হোক না কেন ধামাচাপা পড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এই সবকিছুই নির্ভর করে ভালো দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে। ভালো মানসিকতার অভাবে। সুন্দর বিবেচনার অভাবে। আসলে কাউকে শিখিয়ে পড়িয়ে বুদ্ধির সঠিক পথ প্রদর্শক তৈরি করা যায়। কিন্তু বিবেকটা অন্তর থেকে আসে। তাই জীবনটা খুব অনিশ্চিত, এই অনিশ্চিত জীবনে সুন্দর পরিবেশ সুন্দর মন নিয়ে নতুন প্রজন্মকে সুন্দর মানসিকতা নিয়ে তৈরি করার বাতাবরণই সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারে।