আয়ের ভিতটা আসলে তেমন মজবুত নয়, কিন্তু উপরে-উপরে ঠাটবাট বজায় রাখতেই হবে। বাড়ির মর্টগেজ, গাড়ি বা দু’চাকার কিস্তি-শোধ, ছেলেমেয়ের ইংরেজি ইস্কুলের মাইনে, বৌয়ের জন্মদিন, সপ্তাহে এক দিন বাইরে খাওয়া। তা ছাড়া বছরে অন্তত এক বার দূরে কোথাও গেলে ভাল হয়, নিদেনপক্ষে পুরী-দিঘা। এই সব মিলিয়েই মধ্যবিত্ত। উচ্চাকাঙ্ক্ষী, নড়বড়ে, করুণ। অর্থনীতির পণ্ডিতরা গরিবদের নিয়ে যত মাথা ঘামান, তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশও মধ্যবিত্তদের নিয়ে ঘামান না। অথচ, মধ্যবিত্ত না থাকলে কে জিনিসপত্র কিনত? যে চাহিদার ভরসায় কল-কারখানার চাকা ঘুরছে, কে জোগাত সেই চাহিদা? আগে তবু ভাল-মন্দ মিশিয়ে এক রকম চলছিল, কোভিড-১৯ অতিমারি এসে মধ্যবিত্তের জীবনকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে। কারও চাকরি চলে গিয়েছে, অর্ধেক হয়ে গিয়েছে কারও বেতন, আর যাঁদের এখনও সে সব হয়নি, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আসন্ন সর্বনাশের সম্ভাবনায় সিঁটিয়ে রয়েছেন। মধ্যবিত্তদের একটা সামান্য অংশ অবশ্য আছেন, যাঁদের চাকরি চলে যাওয়ার বা মাইনে কমার ভয় নেই। তাঁদের সিংহভাগই সরকারি চাকুরে। কিন্তু সরকারি চাকরির লটারি ক’জনের কপালে জোটে? যাঁদের জোটেনি, তাঁদের অনেকেই এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে নেমে গিয়ে নিম্নবিত্ত শ্রেণিভুক্ত। ধাক্কাটা ভারতীয় মধ্যবিত্তদের উপর যতটা পড়েছে, অন্য কোনও দেশে ততটা পড়েনি। আমেরিকার চিন্তন-ভান্ডার পিউ রিসার্চ সেন্টার গত মার্চ মাসে প্রকাশিত তাদের রিপোর্টে জানাচ্ছে, ২০২০ সালে কোভিড অতিমারির প্রকোপে তিন কোটি কুড়ি লক্ষ ভারতীয় মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের শ্রেণিতে নেমে গিয়েছেন। বস্তুত, অতিমারির ফলে সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশই ভারতীয়। চিনে এই সংখ্যাটা এক কোটি, অর্থাৎ ভারতের এক-তৃতীয়াংশেরও কম। হিসাবটা তুলনীয়, কারণ জনসংখ্যার নিরিখে দুটো দেশ কাছাকাছি; এবং যে আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে এক জন ভারতীয় নাগরিককে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র বলা হচ্ছে, চিন বা অন্য দেশের নাগরিকদের শ্রেণি-নির্ধারণ করার সময় সেই একই মাপকাঠি ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাপকাঠিটা এই রকম— ভারতীয় বা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের, তাঁদের দৈনিক খরচ অনুযায়ী, পাঁচটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যাঁদের মাথাপিছু দৈনিক ব্যয় দুই আমেরিকান ডলারের সমান বা কম, তাঁদের বলা হচ্ছে দরিদ্র; দৈনিক ব্যয় ২ ডলার থেকে ১০ ডলার হলে নিম্নবিত্ত; ১০ থেকে ২০ ডলার হলে মধ্যবিত্ত; ২০ থেকে ৫০ ডলার হলে উচ্চ মধ্যবিত্ত; আর ৫০ ডলারের বেশি হলে উচ্চবিত্ত। এই শ্রেণিবিভাগ করার সময় ডলারের সঙ্গে টাকার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিময় মূল্য ব্যবহার না করে পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি বা ক্রয়ক্ষমতা-ভিত্তিক বিনিময় মূল্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তার আগে প্রশ্ন, অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভাগের সীমাগুলো কী ভাবে ঠিক হল? মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে উদাহরণ হিসাবে নেওয়া যাক। প্রথমে আহার, বাসস্থান, পরিবহণ, বাচ্চাদের ইস্কুল, পরিবারের আমোদ-প্রমোদ সব মিলিয়ে একটা মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করতে গেলে কত টাকার দরকার, সে বিষয়ে মোটামুটি ধারণা করে নেওয়া হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক দাম অনুযায়ী মাথাপিছু দৈনিক ১০ থেকে ২০ ডলার খরচ করলে এই জীবনযাপন সম্ভব। দেশের বর্তমান মূল্যমান অনুযায়ী দেশের ভিতরে এ বাবদ খরচ করতে হচ্ছে মাথাপিছু দৈনিক ২২০ থেকে ৪৪০ টাকা। অর্থাৎ, ১ ডলারের ক্রয়ক্ষমতা-ভিত্তিক বিনিময় মূল্য দাঁড়াচ্ছে ২২ টাকা। যদি ধরে নিই যে, গড়ে একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার, তা হলে এই হিসাব অনুযায়ী যে সব পরিবার মাসে ২৬,৪০০ টাকা থেকে ৫২,৮০০ টাকা ব্যয় করছে, তারা মধ্যবিত্ত বলে চিহ্নিত হচ্ছে।
একই ভাবে চিহ্নিত হচ্ছে অন্য শ্রেণিগুলো। যেমন, যে সব পরিবারের মাসিক ব্যয় ৫২,৮০০ থেকে ১,৩২,০০০ টাকা, তাদের উচ্চ মধ্যবিত্ত বলা হচ্ছে। পিউ-এর অনুমান, কোভিডের ফলে ৬০ লক্ষ উচ্চ মধ্যবিত্ত নিম্নতর শ্রেণিতে নেমে গিয়েছে। আমরা মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্তর কথা বলছি মানে এই নয় যে, কোভিড-১৯ নিম্নবিত্তদের স্পর্শ করেনি। পিউ-এর হিসাব অনুযায়ী, অতিমারির প্রকোপে সাড়ে তিন কোটি নিম্নবিত্ত মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নেমে গিয়েছেন। অর্থাৎ, সংখ্যার দিক থেকে দেখলে আর্থিক অবনমন নিম্নবিত্তের মধ্যেই সর্বাধিক। তবু আমরা আলাদা করে মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্তদের কথা বলছি, কারণ দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতিতে তাঁদের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। কী ভূমিকা, সেটা বলি। স্কেল বা আয়তন আধুনিক উৎপাদনের অন্যতম প্রধান শর্ত। শিল্পবিপ্লবের পর যখন যান্ত্রিক উৎপাদন শুরু হল, তখন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল উৎপাদনের পরিমাণ। আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রথমেই কারখানা এবং যন্ত্রপাতির পিছনে একটা থোক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। বিনিয়োগের খরচটা বিপুল এবং উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট না হলে খরচটা উঠবে না। কারখানা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হয়ে বাজারে বিক্রি হলে তবেই প্রাথমিক বিনিয়োগটা লাভজনক হবে; এবং, একটা বিনিয়োগ লাভজনক হলে তবেই আসবে আরও বিনিয়োগ, আর্থিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান। অর্থাৎ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গেলে প্রাথমিক ভাবে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন, এবং বড় বিনিয়োগ লাভজনক হতে গেলে একটা বড় বাজার দরকার। ভারতে উচ্চবিত্তরা যে হেতু তুলনায় অল্প— উপরে উল্লিখিত শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ০.২১%— শুধুমাত্র তাঁরা ক্রেতা হলে বেশির ভাগ বিনিয়োগই লাভজনক হবে না। তা ছাড়া উচ্চবিত্তরা বহু ক্ষেত্রেই দেশি পণ্যের তুলনায় বিদেশি পণ্য পছন্দ করেন। উল্টো দিকে নিম্নবিত্তরা আহার-বাসস্থানের সংস্থান করতেই আয়ের সিংহভাগ খরচ করে ফেলেন। আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র কেনার সামর্থ্য তাঁদের কম। তা হলে পড়ে রইল মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত। কোভিডের ঠিক আগে সম্মিলিত ভাবে তাঁদের সংখ্যা ছিল ১২ কোটির উপর— দেশের মোট জনসংখ্যার ৮.৭%। এঁরাই ছিলেন দেশের মূল ক্রেতা, দেশে উৎপাদিত আধুনিক পণ্যের বাজারটাকে এঁরাই ধরে রেখেছিলেন। পিউ-এর অনুমান, কোভিড-১৯’এর প্রকোপে সম্মিলিত ভাবে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের সংখ্যা প্রায় চার কোটি কমে গিয়েছে। ১২ কোটির থেকে চার কোটি কমে যাওয়া মানে ৩৩% হ্রাস। এর ফলে বাজারের আয়তনও যদি ৩৩ শতাংশ কমে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ফের মাথা তুলে দাঁড়াবে কী করে? কোভিড অতিমারি এমন একটা অঘটন, যার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় সরকার কি দেশের মধ্যবিত্তদের সুরক্ষার জন্য আদৌ কিছু করছে? করছে না তো বটেই, বরং বেশ কিছু সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় নীতি মধ্যবিত্তদের আরও বিপাকে ফেলেছে। এই প্রসঙ্গে প্রথমেই পেট্রোপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করতে হয়। এর ফলে জ্বালানির খরচ ভয়ঙ্কর রকম বেড়ে গিয়েছে। যাঁরা কোভিডের হাত থেকে বাঁচার জন্যে চার বা দু’চাকার বাহন কিনবেন ভাবছিলেন, তাঁরা আবার ভেবে দেখছেন। রান্নার গ্যাসের অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্তের পকেটে রীতিমতো টান পড়েছে। তা ছাড়া পরিবহণ মহার্ঘ হওয়ার কারণে সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। মধ্যবিত্তের উপর দ্বিতীয় কোপ ক্রমশ সুদের হার কমে যাওয়া। সুদের হার কমে গেলে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হন মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্তেরা। নিম্নবিত্ত বা দরিদ্রদের সঞ্চয় অতি সামান্য, তাই সুদের হার কমে গেলেও তাঁদের ততটা যায়-আসে না। অপর পক্ষে, উচ্চবিত্তদের একটা বড় অংশ বড় বা মাঝারি ব্যবসায়ী। ব্যবসা চালানোর জন্যে তাঁদের বাজার থেকে ধার করতে হয়। সুদের হার কমলে অধমর্ণ হিসাবে তাঁরা যে সুবিধাটা পান, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের উপর সুদের হার কমে যাওয়ার জন্যে যে ক্ষতি, তার চেয়ে অনেক বেশি। তা ছাড়া সুদ কমলে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়। এর ফলেও কিন্তু সবচেয়ে লাভ বড় ব্যবসায়ীদের, যাঁরা বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক। মধ্যবিত্ত শেয়ার বাজারে টাকা খাটাতে ভয় পান। তাঁর ভরসা সেই সনাতন ব্যাঙ্ক। ফলে, সুদের হার কমে যাওয়ার কোপটা তাঁদের উপরেই পড়ে। সম্প্রতি প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদের উপরেও আয়কর বসেছে। সরকার মধ্যবিত্তদের ব্যাপারে এখনই না ভাবলে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকট।
তোলপাড় করা আবহাওয়া৷ উত্তরবঙ্গে আগামী দু -তিন দিনে একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আইএমডি৷ দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় বেশি বৃষ্টি হবে৷ বজ্র বিদ্যুৎ সহ বড় বৃষ্টির সম্ভাবনা জারি রয়েছে৷ এদিকে কালিংম্পং, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, মালদহে ভারী বৃষ্টির ওয়েদার আপডেট রয়েছে৷ মঙ্গলবার এবং বুধবার এই ধরণের আবহাওয়া জারি থাকবে৷ এরই জেরে অ্যালার্ট জারি রয়েছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে৷ এদিকে উত্তরবঙ্গে তোলপাড় করা আবহাওয়ার ছাড়া দক্ষিণবঙ্গ ও কলকাতায় এখন সেভাবে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে না৷ সব জায়গাতেও ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা জারি রয়েছে৷ কলকাতায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকবে৷
আপেক্ষিক আর্দ্রতার সর্বোচ্চ পরিমাণ ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রচণ্ডভাবে আর্দ্র৷ এদিকে এই দুই পরিস্থিতির জেরে ফের অস্বস্তিকর আবহাওয়া জারি থাকবে৷ ফিল লাইক তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো এমনটাই ওয়েদার আপডেটে জানিয়েছে অ্যাকুওয়েদার৷ কলকাতায় আজ দিনের একাধিক সময়ে হালকা ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা জারি রয়েছে৷ দিনে থেকে রাত বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টির ওয়েদার আপডেট করা হয়েছে৷ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও আকাশ মূলত পরিষ্কার থাকবে৷ ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা জারি থাকছে সব জেলাগুলিতেই৷ তবে ভারী বা মাঝারি বৃষ্টিপাতের চান্স কম থাকবে৷ এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মতো দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে আইএমডি৷ দিল্লি, এনসিআর, উত্তরপ্রদেশ, উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টি জারি থাকবে৷ বৃষ্টি হবে মহারাষ্ট্রে৷ স্কাইমেট ওয়েদার আপডেটে জানিয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি জারি থাকবে৷ যার জেরে আস্তে আস্তে তাপমাত্রা অনেকটা নামবে৷ এবং আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা পড়া শুরু হতে পারে৷
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন বা ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন বা বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তেল পরিবহনের লক্ষ্যে নির্মাণাধীন একটি পাইপলাইন। পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আনার লক্ষ্যে ২০২০ সালে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৩১.৫০ কিলোমিটার পথে পাইপলাইন স্থাপন কাজ শেষ হলে ভারতের নুলাইবাড়ী রিফাইনারি লিমিটেড থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আসবে দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেল ডিপোতে। এতে জ্বালানি তেল সংকট দূর হবে দেশের উত্তরাঞ্চলে। পার্বতীপুর উপজেলার সোনাপুকুর নামক স্থানে এ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করা হয়। ভারতের নুমালীগড় থেকে ১৩১.৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গত ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি জানান, এ ১৩১.৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতের অংশে পাঁচ এবং বাংলাদেশের অংশে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১২৬.৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পে ভারত ৩৪৬ কোটি রুপি ও বাংলাদেশ ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় করবে। আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় ভারত থেকে সরাসরি বাংলাদেশ পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি হবে।
বছরের শুরুতে ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আসবে বাংলাদেশে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশ। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন স্থাপন প্রায় ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে। ভারতের শিলিগুড়িতে চলছে ডিজেল সরবরাহের প্রস্তুতি। আর বাংলাদেশের পার্বতীপুর প্রস্তুত হচ্ছে ভারত থেকে আসা ডিজেল সংরক্ষণ ও সরবরাহের কাজ। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহের কমিশনিং নিয়েও কাজ করছে দুই দেশ। এই পাইপলাইন প্রকল্পের প্রাক্কলন ছিল ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার ৩০৩ কোটি টাকা দেয় এবং বাংলাদেশ সরকার বাকি অর্থ ২১৭ কোটি টাকা দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়কাল ২০২০ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ মাস পর ২২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের প্রথম চালানটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে। আনুষ্ঠানিকভাবে একই বছরের মার্চের শুরুতে পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছরগুলোতে এটি ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ডিজেল নেবে। বাংলাদেশ বর্তমানে লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার ২০০ টন ডিজেল আমদানি করে এবং বিপিসি বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের পার্বতীপুর তেল ডিপোতে জ্বালানি বহন করে এবং পরে ডিজেল গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারত থেকে সরাসরি দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রেলহেড তেল ডিপোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আনার উদ্যোগ নিয়েছে দু-দেশের সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১৮ সালে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ফলে বৃহস্পতিবার পার্বতীপুরের সোনাপুকুর অংশে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। পাইপলাইন ভারতের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ১৩০ কিলোমিটার ভারতের শিলিগুড়ি, বাংলাদেশের পঞ্চগড়, নীলফামারীর হয়ে পার্বতীপুরে আসবে। তেল সরবরাহ শুরু হলে উত্তরাঞ্চলের অঞ্চলের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে তেল পাবে।
মহালয়া শব্দের অর্থ মহান আলয় অর্থাৎ মহান আশ্রয়। আবার মহালয়ার অর্থ হিসেবে পিতৃলোককে বোঝায়। এই জগতের স্বর্গতঃ পিতৃপুরুষরা যেখানে থাকেন বলে বিশ্বাস। অর্থাৎ পিতৃলোককে সশ্রদ্ধ স্মরণ করার অনুষ্ঠানই ‘মহালয়া’ নামে পরিচিত। পিতৃপক্ষের শেষ হবার পর, অমাবস্যার অবসান হলে দেবীপক্ষের শুরু হয়। সেই লগ্নটিকেই আমরা মহালয়া বলে থাকি। এই জন্য মহালয়া ‘স্ত্রীকারান্ত’। এই ত্রিভুবনে দেবী দুর্গাই হলেন মহান আশ্রয়। তার আগমনের লগ্নই ‘ মহালয়া ‘। আবার কেউ কেউ বলেন ‘ পিতৃলোক ‘ হল সেই মহান স্থান। মহালয়া হল পিতৃপূজা ও মতৃপূজার সন্ধিক্ষণ। আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের শুরুতে যে অমাবস্যা আসে, তাকেই মহালয়া বলে অভিহিত করা হয়। মহালয়ার দিন একসাথে আমরা পিতৃপূজা ও মাতৃপূজা দুই’ই করে থাকি। তাই মানব জীবনে, মানব মননে এই দিনটি এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আনে। ভারতীয় ঐতিহ্যের এ এক অপূর্ব অনুভূতি। মহালয়া থেকে দুর্গাপূজার দিন গোনা শুরু হয়ে যায়। মহালয়ার ছয় দিন পরেই আসে মহাসপ্তমী। ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন। লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের অভিলাষ নিয়ে। শরতের এই পূজাকে দেবীর অকাল বোধন বলা হয়। কারণ শ্রীরামচন্দ্র পূজাটি করেছিলেন অকালে, অসময়ে। আসল দুর্গাপূজা হলো বসন্তে তাই একে বাসন্তী পূজা বলা হয়। শোনা যায় সুরথ রাজা এই আসল পূজাটি করেছিলেন বসন্ত কালে। কোন শুভ কাজ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বজসহ সমগ্র জীব জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এটাই বিশ্বাস। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। এর পোশাকি নাম ‘তর্পণ”। তর্পণ মানে সন্তুষ্ট করা। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আশায় বুক বেঁধে এমনই করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে এই ভারতের কোটি কোটি মানুষ মহালয়ার প্রভাতে তিন গন্ডুষ জলের অঞ্জলি দিয়ে আসছেন। আর আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়ে উঠছে – ” ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যন্ত ভূবন এয়ম, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্ত ” -এই মন্ত্র। যার মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে চলেছেন তাদের বিদেহী পিতৃপুরুষ এবং পূর্বপুরুষদের। পুরাণে বলা আছে মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করার দায়িত্ব পান। ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত কোন মানুষ বা কোন দেবতার পক্ষে মহিষাসুরকে বধ করা সম্ভব ছিল না । ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহীষাসুর তার ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত হয়ে ওঠে। একে একে দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে। অঘোষিত ভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হয়ে ওঠার বাসনা তাকে পেয়ে বসে । ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী তখন বাধ্য হয়ে মিলিতভাবে ” মহামায়া ” র রূপে অমোঘ নারী শক্তি সৃষ্টি করলেন। দেবতাদের দান করা দশটি অস্ত্রে সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা সুসজ্জিত হয়ে উঠেন। নয় দিন ব্যাপী ঘোরতর যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন। এভাবেই অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয় প্রতিষ্ঠা পায়। যুগের পর যুগ এই বিশ্বাস, এই ধারা বয়ে আসছে । মহালয়া যেন তারই পরিচয় বহন করে চলেছে। মহালয়া হচ্ছে সেই দিন যেদিন দেবী দুর্গা এই মর্ত্যে অবতরণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস। তিনি এসেছিলেন সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে। মহালয়া পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনা বলে মহালয়াকে দুটি গতিশীল বা চলমান উৎসবের সমাহার বা সম্মিলনও বলা যেতে পারে । হিন্দু পুরাণ মতে এই সময় পিতৃপুরুষের আত্মার স্বর্গ-প্রাপ্তির জন্য পুত্রের দ্বারা শ্রাদ্ধক্রিয়া করা আবশ্যক যাকে বাংলায় বলা হয় ‘ তর্পণ’। প্রাকভোর বা প্রাতঃকালে নদীতে পুত্র তার পিতৃপুরুষদের উদ্দ্যেশ্যে ‘পিণ্ডদান ‘ করে থাকে। আসলে তা জল ও খাদ্য প্রদানের চেষ্টা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
দেবীপক্ষ মানে দেবীকাল। দেবী দুর্গা প্রধান পূজার সাতদিন আগেই মর্ত্যে আসেন। চারদিন ধরে চলা মহাপূজার দিনগোনা শুরু হয় মহালয়ার পূণ্যলগ্ন থেকেই। আর সমগ্র ভূভারতে পূজার ঢাকে কাঠি পড়ে যায় । হিন্দুমতে ভাদ্রের অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কালকেই দেবীপক্ষ বলে মানা হয়। বিশ্বাস করা হয়, হিন্দুদের জন্য কোন পবিত্র কাজ করার শ্রেষ্ঠ সময নাকি এটাই। উত্তর ভারতে অমাবস্যা পরবর্তী নয়দিনকেই নবরাত্রি হিসেবে পালন করা হয়। অমাবস্যার শেষ দিনে দুর্গাপ্রতিমার চোখ অঙ্কিত করা হয়। যা ‘চক্ষুদান’ নামে পরিচিত । মহালয়া অন্য এক বর্ণনা পাওয়া যায় মহাভারতের কাহিনীতে। দাতা কর্ণের মৃত্যুর পর তার কৃত শুভকর্মের জন্য তিনি স্বর্গপ্রাপ্ত হন। সেখানে কর্ণ ক্ষুধার্ত হলে তাকে প্রচুর সোনা, রুপা দেওয়া হয়। তিনি জীবিতকালে সকলকে তাই দিয়ে আসতেন। ক্ষুধার্ত কর্ণ হতাশ হন এবং খাবার চান। যমরাজ তখন বলেন জীবিতকালে কর্ণ মানুষকে কেবল সোনা দানাই দিতেন। কিন্তু পূর্বজদের কখনো খাবার ও জল দেননি। কর্ণ নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ক্ষমা চান। তখন যমরাজ তাকে চোদ্দ দিনের জন্য মর্ত্যে ফেরত পাঠান। কর্ণ মর্ত্যে এসে মানুষকে খাবার প্রদান করেন। পূর্বজদেরও খাদ্য উৎসর্গ করেন। মানুষের আসল প্রয়োজনটা অনুধাবন করতে পারেন। অনেকে বলেন এই চোদ্দ দিনও ‘মহালয়া’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। মহালয়ার প্রভাতে বা ভোরে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয় মহিষাসুরমর্দিনীর আগমনী গান। ঘরে ঘরে বেজে ওঠে ‘ জাগো তুমি জাগো ‘- এর সুর। এর মধ্যে দিয়ে মাকে যেন জাগ্রত হওয়ার করুণ আবেদন জানানো হয়। যাতে মা আবির্ভূত হয়ে এই মর্ত্যধামের সকলের ক্লেশ দূর করেন। মহালয়ায় ‘পূর্বপুরুষদের উদ্দ্যেশ্যে বছরে একবার জলদান করা হিন্দুমতে অত্যন্ত আবশ্যক হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ প্রেতলোকে একদিন আমাদের মর্ত্যের হিসেবে এক বছর কালের সমান বলে বিশ্বাস। আর পূর্বপুরুষরাও নাকি সামান্য জলেরই প্রত্যাশা করেন। এই পূণ্যলগ্নে সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী সব একে অপরের অত্যন্ত কাছাকাছি চলে আসে।’ মহালয়া যেন এক বিশ্বাস। যুগ যুগ ধরে বয়ে আসা এক অমোঘ বিশ্বাস । যা আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের ধারনাকেই প্রতিষ্ঠিত করছে। যা এই মর্ত্যে জীবিতকালেও প্রতিফলিত হয়ে থাকে । মহালয়ার তর্পণ যুগ যুগ ধরে যাবতীয় মানবিক মূল্যবোধের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ভারতীয় সংস্কৃতির এক স্তম্ভ । ধারক এবং বাহক। এর গুরুত্ব অমলিন এবং অক্ষত যা ভাবীকালেও অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে মনে হয়।